প্রথম -
বাড়ি ফিরেই তাড়াতাড়ি মেকআপ তুলতে থাকে শীর্ষা, রবিন জানতে পারলে কি হবে ভেবে উঠতে পারেনা সে। গত তিন বছর ধরে এই মেকআপ তার ভরসা। তিন বছর আগে হঠাৎই গাড়ি এক্সিডেন্টে রবিনের শরীর প্যারালাইসিস হয়ে যায়, সেই থেকে চলছে। চারিদিকে শকুনের চোখ আর চাকরির অভাবের বাজারে 'call girl' এর পেশাই তার একমাত্র ভরসা। দুঃখ, কষ্ট সব লুকিয়ে রেখেছে এই মেকআপের আড়ালে।
এই পেশায় সুন্দরী সাজতে হয় তাকে নাহলে যে শরীর পছন্দ হবেনা বাবুদের, চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে তার।
রবিন কথা বলতে না পারলেও বুঝতে পারে, তাই লোকানোর চেষ্টা! মেকআপ ধুয়ে এসে সোফায় বসতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে শীর্ষা।
দ্বিতীয় -
- "ইস! অনেক বুড়ি লাগছে তো! "
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলে রণিতা। বয়স তার বিয়াল্লিশ কিন্তু স্ট্যাটাস মেইনটেইন করতে বয়স কমানোর চেষ্টায় তিনিও পিছপা হননি।
প্রায় এক ঘন্টা মেকআপ করে উঠে ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে পরে শপিংয়ে। আজ সব ত্রিশ বছর বয়সী মহিলারা একসাথে শপিং করবে। মেকআপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে বয়সটা।
তৃতীয় -
যন্ত্রনায় কেঁপে ওঠে তার শরীরটা। আগের রাতের অত্যাচার আর মারে সারা মুখে কালশিটের দাগ পড়েছে স্নেহার। এদিকে অফিসের সময় আগত।
তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ করে মেকআপ করতে বসে সে। অফিসের সবার সামনে 'Happy family' এর 'show off' এর অভিনয়টা সে ভীষণ সুন্দর ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন। এতো তাড়াতাড়ি হারলে চলবেনা বাচ্চাটা যে বড্ডো ভালোবাসে বাবাকে!
চতুর্থ -
- "মেয়ে যে এতো কালো সে কথা তো আগে বলেননি? নানা, এই বিয়ে হবেনা।"
এবার আর এই কথা শুনতে হয়নি প্রিয়াকে। প্রতিবার এভাবেই তার বিয়ে ভেঙে যায়। তাই এবার সে পার্লার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে মেকআপ দিয়ে ঢেকে নিয়েছে তার আসল রূপ, ফুটিয়ে তুলেছে এক নকল ফর্সা চেহারা।
পাত্রপক্ষ বেরিয়ে গেলে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে সে, ঘষে ঘষে মেকআপ তুলতে থাকে। আয়নার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সে - "কালো হওয়া কি পাপ ভগবান?"
পঞ্চম -
বাড়ি এসে নকল মেকআপ আর নকল পরচুলা টা খুলে ফেলে তৃষা। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার, নিজের পরিচয় লোকানোর চেষ্টায় আজ জয়ী হলেও নিজের কাছে হেরে গেছে তৃষা।
চার বছর ধরে সে এই নকল 'আলিয়া' হয়ে জীবনযাপন করছে। চার বছর আগের করা অপরাধ কাঁদাচ্ছে তাকে আজ।
চার বছর আগে -
তৃষা - "স্যার, সব কটাকে খুন করে ফেলেছি এবার আমার টাকা টা দিন স্যার। আমার বাবাকে বাঁচাতে পারবোনা নাহলে, প্লিজ স্যার।"
বাবার অপারেশনের টাকা যোগাড় করতে পাঁচটা খুন করতে বাধ্য হয় সে। আর তার পরেই সারা পৃথিবীর কাছে তৃষা মল্লিক মৃত। রাতারাতি দেশ ছেড়ে বিদেশে অন্য নাম অন্য পরিচয় নিয়ে বেঁচে আছে সে। প্লাস্টিক সার্জারি করেও মুখের কিছুটা আদল একই রয়ে গেছে সেটাই মেকআপ আর পরচুলা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা চলবে সারাজীবন।